এড়িয়ে লেখায় যান

বিয়ে না করতে পারলে সাওম?

অগাষ্ট 16, 2012

লেখাটি সংগ্রহ করা হয়েছে ফেসবুক পেজ প্রেম নয় বিয়ে করুন, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করুন থেকে।

১) “আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না” [সুরা বাকারাহ ২৮৬]
২) “সামর্থ্য না থাকলে বিয়ে করা যাবে না”।

দুটোই ঠিক আছে। তবে আমজনতা সামর্থ বললে যা বুঝে বসে আছে তাতে গন্ডগোল আছে। কোন ছেলে বিয়ের কথা বললেই যারা মুখস্ত রোজার কথা বলে বসেন তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় সাওম জিনিসটা কোন প্রকটতায়, কোন প্রেক্ষাপটে সেটা ভেবে দেখার সুযোগ পান নি।

একটু ভালভাবে নিচের হাদিসটির দিকে খেয়াল করা যাকঃ

আবু হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম,”হে আল্লাহর রাসুল, আমি একজন যুবক এবং আমি ভয় করি যে আমি হয়ত অবৈধ পথ বেছে নিতে বাধ্য হব কিন্তু আমার বিয়ে করার সামর্থ্যও নেই”।

তিনি [রাসুল (সাঃ)] চুপ থাকলেন।
অতঃপর আমি আমার প্রশ্নটি পুনরায় করলাম কিন্তু তিনি চুপ থাকলেন।
আমি (তৃতীয়বার) একই প্রশ্ন আবার করলাম এবং তিনি চুপ থাকলেন।

তারপর আমি আমার প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি (চতুর্থবার) করলে কেবল তখন তিনি বললেন, “হে আবু হুরাইরা! তুমি কি করতে যাচ্ছ তা লিখে কলম শুকিয়ে গেছে। তুমি খাসি হয়ে যাও আর না যাও”

[সহীহ বুখারী, ভলিউম ৭, অধ্যায় ৬২, হাদিস ১৩]

লক্ষনীয় বিষয়ঃ

  • আবু হুরাইরা (রাঃ) আল্লাহর রাসুল (সা;)এর একজন সম্মানিত সাহাবা যিনি সাহাবা(রাঃ) গনের মধ্যে সবচাইতে বেশি হাদিস বর্ণনা করেছেন।
  • আল্লাহর রাসুলের সম্মানিত সাহাবা হওয়া সত্ত্বেও অক্ষমতার জন্য বিয়ে না করতে পারায় যে ফিতনার সম্মুখীন হচ্ছিলেন তা অসহনীয় ছিল।
  • আল্লাহর রাসুল(সাঃ) সমস্যার কথা শুনে তিন তিন বার চুপ থেকে চতুর্থবারে জবাব দিয়েছেন। প্রথমবারে শুনেই মহাআনন্দে “ বিয়া করতে না পারলে রোযা রাখ” বলে দিয়ে দিগ্বিজয়ী হাসি হাসেন নি।

হ্যাঁ। আল্লাহর রাসুল(সাঃ) বলেছেন,

“হে যুব সম্প্রদায়, তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহের সামর্থ্য রাখে সে যেন বিয়ে করে। কেননা তা চক্ষুকে অবনত করে এবং লজ্জাস্থানকে হেফাযত করে। আর যে এর সামর্থ্য রাখে না, তার কর্তব্য রোযা রাখা। কেননা তা যৌন উত্তেজনার প্রশমন ঘটায়।” [বুখারী : ৫০৬৬; মুসলিম : ৩৪৬৪]

দুঃখের বিষয় হচ্ছে সবাই বিনা বাক্যব্যয়ে বুঝে যায় যে এখানে সামর্থ্যহীন বলতে তাকেই বোঝানো হয়েছে। সুরা নুরের ৩২ নং আয়াতের সম্পূর্ণটা উপলব্ধি করার প্রয়োজনও বোধ করে না। আল্লাহতালা যে বলছেন, “যদি তারা নিঃস্ব হয় তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে স্বচ্ছলতা দান করবেন।“ এই নিঃস্বরা তাহলে কারা?

এই নিঃস্বদের মধ্যে একজন ছিলেন ইতোপূর্বে উল্লিখিত সাহাবা আবু হুরাইরা (রাঃ)। তিনি বলেছেন,

Bukhari :: Book 8 :: Volume 76 :: Hadith 459

By Allah except Whom none has the right to- be worshipped, (sometimes) I used to lay (sleep) on the ground on my liver (abdomen) because of hunger, and (sometimes) I used to bind a stone over my belly because of hunger.

Bukhari :: Book 7 :: Volume 65 :: Hadith 287

Once while I was in a state of fatigue (because of severe hunger), I met ‘Umar bin Al-Khattab, so I asked him to recite a verse from Allah’s Book to me. He entered his house and interpreted it to me. (Then I went out and) after walking for a short distance, I fell on my face because of fatigue and severe hunger. Suddenly I saw Allah’s Apostle standing by my head. He said, “O Abu Huraira!” I replied, “Labbaik, O Allah’s Apostle, and Sadaik!” Then he held me by the hand, and made me get up. Then he came to know what I was suffering from. He took me to his house, and ordered a big bowl of milk for me. I drank thereof and he said, “Drink more, O Abu Hirr!” So I drank again, whereupon he again said, “Drink more.” So I drank more till my belly became full and looked like a bowl.

না। এই সাহাবা (রাঃ) যারা বিয়ে করার সামর্থ্য রাখত না, তারা গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ফাস্টফুডের দোকানে যাবার সামর্থ্য রাখতেন না। উনাদের বাবা-মা উনাদেরকে ল্যাপটপ, আইফোন, আইপ্যাড সব কিনে দিতে পারা সত্ত্বেও সামর্থ্যহীন সান্তনা দিয়ে বিয়ে থেকে দূরে রাখতেন না। কিংবা প্রতিমাসে ছেলে মেয়ের শিক্ষার পেছনে মৌলিক অধিকার হবার কারনে বস্তায় বস্তায় টাকা ঢালার সামর্থ্য রাখলেও যৌন চাহিদাকে গৌণ বিবেচনায় বিয়ে থেকে দূরে রাখতেন না। ওনাদের সমস্যা ছিল কি জানেন?

Volume 9, Book 92, Number 425:

Narrated Muhammad:
We were with Abu Huraira while he was wearing two linen garments dyed with red clay. He cleaned his nose with his garment, saying, “Bravo! Bravo! Abu Huraira is cleaning his nose with linen! There came a time when I would fall senseless between the pulpit of Allah’s Apostle and ‘Aisha’s dwelling whereupon a passerby would come and put his foot on my neck, considering me a mad man, but in fact, I had no madness, I suffered nothing but hunger.”

যে সকল আর্থিক অস্বচ্ছল মুসলিম ভাইয়েদের একটা ল্যাপটপ বা পিসি আর একটা দামী মোবাইল সেট ছাড়া সম্পদ বলতে কিছুই নেই বিধায় সাওম পালন করে মাশা আল্লাহ কালাতিপাত করছেন তারা জেনে রাখুন ঐ সাহাবা (রাঃ) এর কথা যিনি বিয়ের মোহরানা হিসেবে একটা লোহার আংটিও যোগাড় করতে পারেন নি। আরো জেনে রাখুন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) তার বিয়ে দিয়েছিলেন কেবল কুরআনের জ্ঞানের কারনে। [দেখুন বুখারী Volume 9, Book 92, Number 425]

আরো জেনে রাখুন লেখাপড়া-ক্যারিয়ার নামক যেসব মরিচীকার আশায় পবিত্রতা নামক জিনিসটিকে বিসর্জন দেয়া হচ্ছে সেটি বিয়ে না করার কোন বৈধ কারন নয়। দিব্যি চাকরী-বাকরী করা প্র্যাকটিসিং মুসলিম ভাইয়েরা কোন এক কারনে ফিতনা থেকে দূরে থাকতে এতটাই পারদর্শী হয়ে উঠেছেন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) যেই ফিতনাকে উম্মাতের জন্য সব চাইতে বড় বলে গেলেন সেই ফিতনার দরজা বন্ধ করবার জন্য তাড়াহুড়োর কিছু নেই ভেবে নিশ্চিন্ত আছেন।

আমি অবাক হই বর্তমান যুগের মুসলিম ভাইয়েদের আত্নসংবরণ ক্ষমতা দেখে। ইবনে মাসউদ (রাঃ) যেখানে বলতেন,”আমি যদি বেচে থাকার জন্য দশ দিন সময় পেতাম আর আমি জানতাম যে এই সময়ের পর আমি মারা যাব আর আমার বিয়ে করার ইচ্ছা থাকত তবে আমি বিয়ে করতাম ফিতনায় জড়ানোর আশংকায়।”

আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে এই সব ভাইবোনদের কাছে যারা আল্লাহকে ভয় করেন, প্রায় বছর দুই এক ধরে একটা কোন রকম জবও করছেন তারা বছরে ত্রিশ দিনের বেশি কয় দিন সাওম পালনের মাধ্যমে এমন কঠিন সবর ধারনের ক্ষমতা পেলেন যে আরও দুই তিন বছর এভাবেই কাটিয়ে দিতে পারার অনুপ্রেরণা পেলেন।

আল্লাহতালা আমাদেরকে যা দিয়েছেন তাতে সন্তুষ্ট থাকা ও তাওয়াক্কুল করবার তওফীক দান করুন। আমীন।

আপনার মন্তব্য রেখে যান এখানে, জানিয়ে যান আপনার চিন্তা আর অনুভুতি